ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

প্রিয়নবী (সা.) : উম্মতের মুক্তিই ছিল যার ভাবনা-১

Daily Inqilab মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম

আল্লাহর বন্ধু হযরত ইবরাহীম (আ.), সঙ্গে পুত্র ইসমাঈল। কাবা শরীফ নির্মাণ সমাপ্ত করলেন, দু’জনে মিলে। হযরত ইবরাহীম (আ.) এর হৃদয়-সমুদ্রে তরঙ্গ এল। আরজি পেশ করলেন ঘরের মালিকের নিকট : আয় আমাদের রব! আমাদের পক্ষ থেকে (এই ক্ষুদ্র নিবেদনটুকু) কবুল করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই মহান শ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আপনার একান্ত অনুগত বানিয়ে নিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যেও এমন উম্মত সৃষ্টি করুন, যারা আপনার একান্ত অনুগত হবে এবং আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দিন এবং আমাদের তওবা কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি এবং কেবল আপনিই ক্ষমাপ্রবণ (এবং) অতিশয় দয়ার মালিক।

হে পরওয়ারদেগার! তাদের (আমার উত্তরসূরিদের) মধ্যে এমন একজন রাসূলও প্রেরণ করুন, যে তাদেরই মধ্য থেকে হবে এবং যে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। নিশ্চয়ই আপনার এবং কেবল আপনারই সত্তা এমন, যাঁর ক্ষমতা পরিপূর্ণ, প্রজ্ঞাও পরিপূর্ণ। (সূরা বাকারা : ১২৭-১২৯)।

আল্লাহ শুনলেন বন্ধু ইবরাহীমের রোনাজারী। প্রেরণ করলেন এক ‘মহান শিশু’। নবী ইসমাঈলেরই ঔরসে। সেই কাবা প্রান্তরেই, মক্কা নগরীতে। তিনি রহমত, নূর ও জ্যোতি। তিনি পথপ্রদর্শক, সত্যের দিশারী। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। তিনি বাশীর ও নাযীর। তিনি গরীবের বন্ধু, অসহায়ের সহায়। অত্যাচারিতের আশ্রয় ও বঞ্চিতের ঠিকানা। তিনি মাহবুবে খোদা, সত্য ও ন্যায়ের বাদশাহ, জুলুম নিপাতকারী এবং উত্তম আচরণ প্রতিষ্ঠাকারী।
তিনি জাতির আদর্শ শিক্ষক, উম্মতের প্রকৃত রাহবার। তিনি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব, আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি উম্মতের মহান মুহসিন, শাফাআতের নবী এবং আখেরী রাসূল। তিনি...। তিনি...। তিনি আর কেউ নন, আমার তোমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত, সত্য, কিতাব এবং প্রমাণ নিয়ে। তাঁর আবির্ভাব আমাদের জন্য এক মহা নিআমত। মহান রবের মহান ইহসান।

আল্লাহ বলেন : বাস্তবিকপক্ষে আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন- তিনি তাদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরই মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র-পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। আর তারা এর পূর্বে ছিল স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৪)। শোকর তোমার হে দয়াময়, ভ্রষ্টতা থেকে আলোর পথে এনে সেই নবীর উম্মতের কাতারে শামিল করেছ বলে।

নবীজী ছিলেন উম্মতের হেদায়েত, নাজাত ও মুক্তির জন্য সদা বিভোর। উম্মতের কল্যাণ সাধনই ছিল তাঁর জীবনের সবকিছু। উম্মত কীভাবে অশান্তি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে চির শান্তি ও সফলতা লাভ করতে পারে, কীভাবে কুফর শিরক ও গোমরাহী থেকে মুক্তি পেয়ে ঈমানের নূরে উদ্ভাসিত হতে পারে- এ নিয়ে ছিল তাঁর দিলে ভীষণ তড়প।

কুরআনে কারীমে নবীজীর এ অবস্থার চিত্রায়ণ হয়েছে অত্যন্ত চমৎকার ভঙ্গিমায়। আল্লাহ তাআলা প্রিয় হাবীবকে উদ্দেশ্য করে বলেন : (হে রাসূল!) তারা ঈমান (কেন) আনছে না, এই দুঃখে মনে হচ্ছে আপনি নিজেকে শেষ করে ফেলবেন! (সূরা শুআরা : ৩)। হাঁ, তিনি সেই নবী, যিনি উম্মতের হেদায়েত ও নাজাতের জন্য নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন।

এ মুহূর্তে স্মরণ করতে পারি নবীজীর তায়েফ সফরের দৃশ্যগুলো। সীরাতের সাধারণ পাঠকেরও জানা আছে- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাওহীদ ও ঈমানের দাওয়াত নিয়ে তায়েফে গমন করেন তখন তাঁর ওপর দিয়ে কতটা নিষ্ঠুরতা বয়ে যায়! আঘাতে আঘাতে তাঁকে কতটা নির্মমভাবে রক্তাক্ত করা হয়! হৈ হুল্লোড় ও অশ্রাব্য বাক্যবাণে তাঁকে কতটা হেনস্তা করা হয়! উম্মতের হেদায়েতের খাতিরে নবীজী সব সয়ে গেছেন। কিন্তু আসমানের মালিকের তা সহ্য হয়নি। পাঠিয়ে দিয়েছেন হযরত জিবরীল (আ.) কে দলবলসহ।

জিবরীল (আ.) এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জাতি আপনার সাথে যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে আল্লাহ তাআলা সব দেখেছেন। এই দেখুন আমার সাথে রয়েছে পাহাড়ের ফেরেশতা। আপনি তাদেরকে যেভাবে শায়েস্তা করতে বলবেন ফেরেশতারা তাই করবে।

এরপর এলেন পাহাড়ের ফেরেশতা। নবীজীকে সালাম করে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! যা কিছু ঘটে গেল আল্লাহ তাআলা সব দেখেছেন। এখন আমি এসেছি। আপনি আমাকে যেভাবে হুকুম করবেন সেভাবেই করব। আপনি যদি চান তাহলে দুই পাহাড়কে একত্র করে তাদেরকে পিষ্ট করে দিব?

রহমতের নবীর দয়া এখানেও প্রবল থাকল। বললেন : (না,) বরং আমি তো আশা রাখি, আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রজন্মকে তাওহীদের জন্য কবুল করবেন। তারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে। তার সাথে আর কাউকে শরীক করবে না। (সহীহ বুখারী : ৩২৩১)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন